শবে কদরের নামাজের নিয়ত । লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম

রমজান মাসের কদরের রাতে আল্লাহ পবিত্র কোরআন নাজিল করেন। তাই ঈই গুরুত্বপূর্ণ রাত অর্থাৎ শবে কদরের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম জানতে চান অবেকেই।

প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “শবে কদরের নামাজের নিয়ত । লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম” এ।

আরও পড়ুনঃ সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

আজকে আমরা লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত বাংলা ও আরবিতে, শবে কদরের নামাজের নিয়ম, শবে কদর সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

শবে কদর কি

পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিনের এমন একটি বিজোড় রাত আসে যাকে শবে কদরের রাত বলা হয়। কারণ, এই রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিলো।

আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদরের দোয়া

রমজানের শেষ দশ দিন্র বিজোড় তারাবির রাতে কদর হয়ে থাকে। বিভিন্ন আলেমদের মতে এই রাতটি হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশী থাকে ২৩, ২৭ ও ২৯ শে তারাবির রাতে।

এ সম্পর্কে বিশুদ্ধ তথ্য হচ্ছে , রমজানের শেষ দশ দিনের প্রত্যেক বিজোড় তারাবির রাতের যেকোনো রাতে শবে কদর হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদরের দোয়া । শবে কদরের আমল সমূহ

তাই প্রত্যেক বিজোড় রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত। কারণ শবে কদরের রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।

তাই এই রাতে সকল মুসলমান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বেশি বেশি ইবাদত করেন। আল্লাহ তায়লার কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহ কামনা করেন।

যেহেতু একমাত্র নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর খুব কাছাকাছি হওয়া যায় তাই এই রাতে উল্লেখ যোগ্য ইবাদত হিসেবে নফল নামাজ পড়া হয়। এই নামাজকেই মূলত শবে কদরের নামাজ বলে।

শবে কদরের নামাজ নিয়ত করা জরুরি

শুধু মাত্র শবে কদর নয়, কোনও নামাজেই মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করার কোনও বিধান নেই। তাই শবে কদরের নামাজের জন্যেও আলাদাভাবে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই।

বান্দা যখন শবে কদরের নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্য নিয়ে নামাজ আদায় করে থাকেন তখন ই লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত করা হয়ে যায়।

তবে,লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত নামে একটি উল্লেখযোগ্য নিয়ত আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে।

অনেকে মনে করেন, সকল নামাজ সহ শবে কদরের নামাজেও নিয়ত করতে হয়। এটি বিশেষ করে আগের কালের মানুষের বেলায় হয়ে থাকে।

কারণ, তারা ছোট বেলা থেকে এটি করে আসছে। তাই লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত করা নিয়ে তাদের চিন্তা একটু ভিন্ন।

সব জায়গায় অধিক প্রচলিত শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি এবং শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায় প্রচলিত আছে।

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত

আমরা জেনেছি যে, অন্যান্য সকল নামাজের মতো শবে কদরের নামাজেও মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করার কোনও বিধান নেই।

কিন্তু এরপরেও শবে কদরের নামাজের নিয়ত জানতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য নিচে শবে কদরের নিয়ত আরবি এবং বাংলায় উল্লেখ করা হলও।

আরও পড়ুনঃ সূরা তারাবি পড়ার নিয়ম । সূরা তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত

নিচে লাইলাতুল কদর অর্থাৎ শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি এবং বাংলা দেখে নিন।

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত আরবিঃ

নাওয়ইতু আন উছা-ল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকা আতাই সালাতিল লাইলাতিল কদর, নফলে মুতা – ওয়াজ্জিহানন ইলাজ্জি হাতিল কা-বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু – আকবর।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায়ঃ

হে আল্লাহ, আমি কিবলামুখী হয়ে তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি,  আল্লাহু – আকবর।

আপনি যদি শবে কদরের রাতে নফল নামাজ আদায়ের জন্য নফল নামাজের নিয়ত করতে চান তাহলে উপরে উল্লেখিত নিয়ত করতে পারেন।

উপরের নিয়ত দুইটি হচ্ছে লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত আরবি এবং শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলায়।

আশা করছি আপনি শবে কদরের নিয়ত জানতে পারছেন। এখান থেকে মুখস্ত করে নফল নামাজে প্রয়োগ করতে পারেন।

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম

লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। অর্থাৎ সাধারণ নিয়মে ২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়লেই লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়া হবে।

আরও পড়ুনঃ  শেষ রমজান নিয়ে স্ট্যাটাস

অর্থাৎ অন্যান্য সময়ে যেভাবে নামাজ আদায় করেন ঠিক একই ভাবে লাইলাতুল কদরের নফল নামাজ আদায় করবেন।

শুধু মাত্র কদরের নামাজের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেঃ

  • নামাজ হবে ২ রাকাত করে।
  • ধিরস্থির ভাবে যতটা সম্ভব দীর্ঘ (বড় বড়) সূরা পাঠ করে কদরের নামাজ আদায় করা উত্তম।
  • নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার কোনও প্রয়োজন নেই।
  • নামাজে দাড়িয়ে আল্লাহু আকবর বলে হাত বেধে ছানা পড়ে অন্যান্য নামাজের মতো শুরু করতে হবে।
  • প্রথম এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং এর সাথে অন্য যেকোনো দুইটি ভিন্ন সূরা যুক্ত করে পড়তে হবে।
  • দ্বিতীয় রাকাতে আখেরি বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবে তাশাহুদ, দরুদ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে।
  • আখেরি বৈঠকে দোয়া মাসুরা পড়ার পড়ে বেশ কিছু দোয়া আছে সেইখান থেকে এখানে একটি বা একাধিক দোয়া পাঠ করা উচিত। এটি করা উত্তম। নবীজি করতেন।
  • এরপর ডান এবং বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।

২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি খেয়াল করলেই শবে কদরের নামাজ সাবলীলভাবে পড়তে পারবেন।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম এবং আখেরি বৈঠকের অতিরিক্ত দোয়া জেনে নিতে শবে কদরের নামাজের নিয়ম পোস্টটি ভিজিট করুন।

লাইলাতুল কদরের দোয়া

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর একটি অন্যতম মহিমান্বিত রাত। কারণ এই রাতে মুসলমান জাতির উপরে কোরআন নাজিল হয়েছে।

তাই এই রাতের দোয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতকে ভাগ্য নির্ধারণি রাতও বলা হয়ে থাকে।

আপনি লাইলাতুল কদরের রাতে যেকোনো দোয়া যেকোনো ক্ষমা প্রার্থনা করার দোয়া আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করার দোয়া করতে পারেন।

শবে কদরের রাতে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বিশেষ দোয়া করতেন। হজরত আয়শা ( রাঃ) একদিন নবীজিকে জিগ্যেস করেন যে, হে নবী কদরের রাত বুঝতে পারলে আমি কি দোয়া পড়ব?

নবীজি মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, কদরের রাতে এই দোয়াটি পালন পাঠ করবে,

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

বাংলা উচ্চারণ : “আল্লাহ হুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি”

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ তায়ালা, আপনি পরম ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

সুতরাং, আমাদের সবার লাইলাতুল কদরের রাতে লাইলাতুল কদরের বিশেষ এই দোয়াটি বেশি বেশি করে পাঠ করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ “সালাতুল হাজত” সালাত আদায়ের উপকার ও নিয়ম

এছাড়াও লাইলাতুল কদরের ১০ টির বেশি দোয়া জানতে শবে কদরের দোয়া পোস্টটি ভিজিট করুন।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর

শবে কদরের নামাজ কয় রাকাত?

লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়তেই হবে এমন কোনো বিধান নেই। নামাজ না পড়ে অন্যান্য ইবাদতও করা যায়।

অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের নামাজের নির্দিষ্ট কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তবে ২ রাকাত করে যত খুশি নফল নামাজ পড়তে পারেন।

শবে কদরের ফজিলত এত বেশি হওয়ার কারণ কি?

রমজানের শবে কদরের রাতে আল্লাহ কোরআন নাজিল করেন। এই রাত মহিমান্নিত একটি রাত।

এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের বিশেষ ক্ষমা এবং নাজাত দিয়ে থাকেন। এছাড়াও এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন।

রাতকে ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বলা হয়। তাই এই রাতের ফজিলত অনেক।

কদর নামাজ কখন পড়তে হয়?

বিশুদ্ধ তথ্য হচ্ছে, রমজানের শেষ দশকের সব বিজোড় রাতে (বিজোড় তারাবির রাত) কদরের নামাজ পড়া উত্তম।

কারণ, শবে কদর যেকোনো বিজোড় তারাবির রাতে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা একটু হলেও থাকে। তবে ২৫,২৭ ও ২৯ তারাবির রাতে হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

শবে কদরের রাতে কি কি ইবাদত করা যায়?

শবে কদরের রাতে যেকোনো ইবাদত করতে পারেন। যেমনঃ

১) বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। 
২) এশার পরে তারাবির নামাজ আদায় করা।
৩) শেষ রাতে সেহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।
৪) সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।
৫) কুরআন তেলাওয়াত করা।
৬) সম্ভব হলে তাওবার নামাজ আদায় করা।
৭) সম্ভব হলে সালাতুল হাজাত আদায় করা।
৮) সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করা।
৯) মসজিদে প্রবেশ করেই ২ রাকাত (দুখুলিল মাসজিদ) নামাজ আদায় করা।
১০) দুই রাকাত করে করে(মাগরিবের পর ৬ রাকাত) আউওয়াবিনের নামাজ আদায় করা।
১১) বেশি বেশি দরূদ শরিফ পাঠ করা।
১২) তাওবাহ-ইসতেগফার, সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পাঠ করা।
১৩) বেশি বেশি জিকির-আজকার করা।
১৪) কোরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়া পড়া।
১৫) পরিবার পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া ও কবর জেয়ারত করা।
১৬) সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি বেশি দান-সদকা করা।
১৭) সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাসির, সুরা ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রাহমান, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা কুরাইশ এবং ৪ কুল পড়া।

শবে কদরের নিয়ত সম্পর্কিত সর্বশেষ কিছু কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি এবং বাংলায় এবং লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জেনেছি।

আশা করছি কদরের রাতের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম সহ কদর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জেনেছেন।

শবে কদর এবং ইসলাম সম্পর্কিত সকল পোস্ট পড়তে আমাদের Islamic info Category ভিজিট করুন।

আমাদের সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ  Dainikkantha এ।

2 thoughts on “শবে কদরের নামাজের নিয়ত । লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.